On Zudo's 6th homecoming

উঠলো বাই তো কটক যাই। তবে বাই একদিনেই ওঠেনি, অনেক দিন ধরেই উঠবো উঠবো করছে। বাড়িতে আনা হবে পোষ্য। স্পেসিফিকেলি একটি কুকুর। আমার ছোটবেলা থেকেই এই স্বপ্নটা দেখিয়ে পাপা খুব ভুল কাজ করেছে (অ্যাকর্ডিং টু মাম্মা) এবং আমি যতই জেদ করিনা কেনো একজনের সম্মতি পাওয়া যেতো না। আশা করছি সেটা কে, তা অনুমান করা খুব একটা দুষ্কর নয়। যাইহোক তার এই অসম্মতি খুব একটা যে আনরিজ়নেবল্ ছিল তা কিন্তু নয়। সবকিছুরই ভালো দিক আছে, তেমন ড্রব্যাকসও আছে। "ঘুরতে বেরোলে উনি কোথায় থাকবেন" এবং তার চেয়েও একটা বড় প্রশ্ন, "ওনার প্রভাতকম্মের দাই কিন্তু আমি (অর্থাৎ মাম্মা) বহন করব না"। তা ছাড়াও ছিল অনেক শর্ত, ঠাকুরঘরে প্রবেশ নিষিদ্ধ, খাটে ওঠা একেবারেই চলবে না এবং একান্তই ভালো বাচ্চা না হলে যেনো মাম্মার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। ও থাকবে ওর মতন এবং মাম্মা থাকবে মাম্মার মতন। আরও অনেক কিছু যা আপাতত এই মোটা মাথা থেকে বেরোতে চাইছেনা।

২০১৭। সেপ্টেম্বর। আম্মা আশ্বাস দিলো আমাদের অনুপস্থিতিতে কুকুরের দায়িত্ব আম্মা দাদানের। শুনে তো আমি সপ্তম স্বর্গে। ম্যাম্মাও একটু খুশিই হলো বলা যায়। শুরু হল হান্ট ফর দি বেস্ট পাপ্পি। এদিক ওদিক রিসার্চ করা, হাজার খানা নম্বর জোগাড় করা, কলকাতায় গ্যালীফ্ স্ট্রীট আসার পরিকল্পনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন অবস্থা হয়েছিল, মনে হতে শুরু করলো আমার ফ্যামিলির সবাই যেনো সব রকম কুকুরের ব্রিডের নাম বলতে পারে। একেবারেই মিথ্যে নয়, একটা হেলথি বাচ্চা খোজার জন্যে যা নয় তাই করছিলাম। তার ওপর কথাতেই আছে যত মত তত পথ। একজন এটা বলছে তো আরো একজন অন্য। সে আরেক ঝামেলা। একজনকে ফাইনালি বুক করা হলো মালদায়, যার ব্যবসা ছিল কুকুরেরই এবং আমরা ঠিক করলাম একটি ডালমেশিয়ান ছানা নেওয়া হবে। ডেলিভারির এক্সপেকটেড্ ডেট হল ডিসেম্বর।

মনমেজাজ সবার ফূর্তিতে, শুরু করলাম আমি আর মাম্মা মিলে মর্নিং ওয়াকে যাওয়া। সাথে দুজনের একটু কথাও হত। আমার ক্লাস ৯, টিউশন ছাড়াও চলছে সাঁতার এবং গীটার ফুল দমে। কথা বার্তা হত ওই যা বাইকে বসে এবং তাড়াহুড়ো করে সুইমিং এর আগে খাওয়ার সময়ে। একদিন এরোম প্রভাতফেরিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলো, আমাদের বাড়ির নতুন সদস্যের নাম হবে "জ়ূডো"। তা ভালো কথা।

ডিসেম্বর ২০১৭, খবর আসে আমরা যেই বাচ্চাটিকে নিতাম, তার মায়ের কোনো কারণে কিছু সমস্যা হওয়ায় সবকটা বাচ্চাই স্টিলবর্ন। যথারীতি একটা খারাপ লাগার জায়গায় এসে দাড়ালো জিনিসটা। ঠিক করলাম ইন্ডি পাপি নেওয়া হবে। ওহ বাবা, যার কাছ থেকে নিতাম, তিনি আবার ১টি বাচ্চা দিতে রাজি নন। কম করে ২টি বাচ্চা নিতেই হবে, পাছে একজন একা থাকলে ডিপ্রেশনে চলে যায়। কথাটা খুব একটা ভুল নয় কিন্তু আরো হাজার খানা কুকুর একাই ছোট থেকে বড় হয়েছে এবং যথেষ্ট পূর্ণ আকার ধারণ করেছে। আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা আমাদের বাচ্চার ওপরে কোনো রকম দাগ আসতে দেবোনা। ইন্ডী পাপ ক্যান্সেল।

ফেব্রুয়ারি ২০১৮, আমাদের এক প্রতিবেশীর সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম হাওড়াতে ওনার চেনা জানা একজন ব্রিডার আছে, যে ল্যাব্রাডোর দিতে পারবে। চকলেট ইনক্লুডেড। শুনে তো আমি আর থাকতে পারলাম না, সবার সম্মতি নিয়ে অর্ডার করে ফেললাম একটি বাচ্চা। অসীম জেঠু RPF হওয়ায় নিয়ে আসার ব্যাপারটায় মাথা একটুও ঘামাতে হয়নি।

এপ্রিল ১৩, ২০১৮। আমার ফোনে একটা ভিডিও আসে, "কোনটা চাই তাড়াতাড়ি দেখে বল"। ৩টে ফুটফুটে কুকুরছানা, একজনের হাতেই ৩টে ধরে যাচ্ছে! আমি বললাম এই ব্রাউনটা কেমন হবে? ওদিক থেকে উত্তর আসল "উত্তরবঙ্গে আপাতত একটাও নেই।" একটাই সমস্যা, নাম তো ঠিক হয়েগেছে। সেটার কি হবে? মাম্মা বলল "নাম যখন ঠিক হয়েগেছে তাই থাক। আমাদের জ়ূডো ঘোরে আসুক"। সুন্দর।

এপ্রিল ১৫, ২০১৮। সকালে দীপা ম্যামের বায়োলজি টিউশন কামাই দিয়ে গেলাম মালদা টাউন স্টেশনে জ়ূডো কে আনতে। অসীম জেঠু নিজের কাজ সেরে যখন স্টেশন থেকে বেরোলো, শুনতে পেলাম কটা ঘেউ ঘেউ শব্দ। একটি কমলা রঙের ঝুড়ির ভেতরে করে আসছে আমাদের জ়ূডো। "সারা রাত ঘুমোতে দেয়নি সালাটা... নিয়ে যা একে!" অসীম জেঠু বলল। সত্যি তাই, সারা রাস্তা পাউ পাউ করতে করতে এসে পৌঁছলাম বাড়ি। ওনাকে ছাড়তেই উনি মেঝের কিছুটা অংশ শুকে নিয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুম দিলেন, প্রায় ২ ঘণ্টা।

গল্প শুরু।

3 weeks at home.


Popular Posts